হনুমানজীর ১০টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র - হনুমান মন্ত্র জপের উপকারিতা
হিন্দু ধর্মে ভগবান হনুমানজী হলেন এমন একজন ভগবান যিনি এখনো জীবিত আছেন। হনুমানজীর ভক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তিনি ভক্তদের ডাক সবার আগে শোনেন এবং ভক্তদের বিপদ থেকে রক্ষা করেন এবং ভক্তদের আধ্যাত্মিক পথে এগিয়ে নিয়ে যান। হনুমান মন্ত্র জপের মাধ্যমে আমরা শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করতে পারি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক হনুমানজীর ১০টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র কি কি এবং কোন মন্ত্র জপের কি উপকারিতা আছে।
হনুমান মন্ত্র জপের কি কি উপকারিতা
১. শক্তি ও সাহস বৃদ্ধি:
হনুমান মন্ত্র জপ করলে ভক্তের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও সাহস বৃদ্ধি পায়।
২. বিপদ থেকে সুরক্ষা:
হনুমান চল্লিশার ৩৬ নম্বর দোহায় লেখাই আছে ,-
"সংকট কটৈ মিটৈ সব পীড়া ।
জো সুমিরৈ হনুমত বল বীরা ॥ "
হনুমানজী ভক্তদের সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
৩. মানসিক শান্তি:
মন্ত্র জপ করলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে যায়।
৪. আধ্যাত্মিক উন্নতি:
হনুমান মন্ত্র জপ আধ্যাত্মিক চেতনা বৃদ্ধি করে এবং মোক্ষ লাভের পথ সুগম করে।
৫. নেতিবাচক শক্তি দূরীকরণ:
এই মন্ত্রগুলি নেতিবাচক শক্তি ও ভূত-প্রেতের প্রভাব দূর করে।
এবার আলোচনা করব হনুমানজীর ১০টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র সম্পর্কে ,-
১. হনুমান চল্লিশা:
হনুমান চালিসা হল হনুমানজীর সবচেয়ে জনপ্রিয় স্তোত্র। তুলসী দাসী রচিত এই হনুমান চল্লিশা চল্লিশটি দোহা আছে। এবং এটি নিষ্ঠা ভরে ব্রহ্মচারী প্রথা বজায় রেখে পাঠ করলে ভক্তের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। এছাড়া যে ভক্ত প্রতিদিন নিয়মিত ব্রহ্মচারী হয়ে নিষ্ঠা ভক্তি ভরে এই হনুমান চল্লিশার নিয়মিত পাঠ করেন তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য হনুমানজি স্বয়ং আসেন।
২. হনুমান বীজ মন্ত্র:
"ওঁ হং হনুমতে নমঃ" ।।
গুরু দ্বারা প্রদত্ত এই মন্ত্রটি যদি আপনি প্রতিনিয়ত জপ করতে পারেন এবং প্রতিদিন যদি কমপক্ষে ১১ টি, ২১ টি বা ১০৮ টি মালা জপ করতে পারেন তাহলে জীবনের সমস্ত দুঃখ জ্বালা-যন্ত্রণা দূর হয়ে গিয়ে আপনার জীবনে সুখ শান্তিতে ভরে উঠবে।
৩. হনুমান গায়ত্রী মন্ত্র:
"ওঁ অঞ্জনেয়ায় বিদ্মহে বায়ুপুত্রায় ধীমহি তন্নো হনুমান প্রচোদয়াৎ ।।"
এই মন্ত্রটি হনুমানজীর আশীর্বাদ লাভের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মন্ত্র। বলা হয় এই মন্ত্রটি জব করলে খুব দ্রুত হনুমানজি প্রসন্ন হন এবং আপনার মনস্কামনা পূর্ণ করেন।
৪. হনুমানজি সবথেকে কাছের মন্ত্র:
"ওঁ নমো ভগবতে হনুমতে রামদূতায় স্বাহা ।।"
বলা হয় এই মন্ত্রটি হনুমানজি সবথেকে কাছের মন্ত্র এবং সব থেকে প্রিয় মন্ত্র কারণ এই মন্ত্রে একই সঙ্গে ভগবান বিষ্ণু এবং ভগবান রাম দুজনের নামই বর্তমান। তাই এই মন্ত্রটির নিয়মিত জপে ভক্তের জীবনে সাফল্য ও সমৃদ্ধি আনতে সাহায্য করে।
৫. বজরঙ্গ বাণ:
এই মন্ত্রটি হনুমানজীর শক্তিশালী রূপের প্রতীক এবং এই বজরংবান পাঠ করলে খুব দ্রুত আপনার মনস্কামনা পূর্ণ করেন ভগবান স্বয়ং হনুমানজি। এটি নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং ভক্তকে সুরক্ষা প্রদান করে।
তবে বজরংবান সব সময় পার করা ঠিক নয় কারণ এখানে হনুমানজিকে , রামজির বচন দেয়া হয়েছে । তাই খুব বিপদে না পড়লে কখনো এই বজরংবান পাঠ করবেন না।
৬. সংকট মোচন হনুমান অষ্টক পাঠ:
হনুমান অষ্টক নিয়মিতভাবে যদি প্রত্যেক মঙ্গলবার শুদ্ধ চিত্তে পাঠ করা যায়, তাহলে শারীরিক কোন অসুবিধা জ্বালা যন্ত্রণা রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এছাড়া পরিবারের অন্য কারোরও যদি কোন কঠিন রোগ থাকে , তারও ব্যাধির উপসং ঘটে। মোটকথা এই স্তোত্রটি ভক্তের সব ধরনের সংকট দূর করে এবং জীবনে সুখ ও শান্তি আনে।
৭. পঞ্চমুখী হনুমান মন্ত্র:
"ওং নমো ভগবতে পংচবদনায় পূর্বকপিমুখায় সকলশত্রুসংহারকায় স্বাহা ।
ওং নমো ভগবতে পংচবদনায় দক্ষিণমুখায় করালবদনায় নরসিংহায় সকলভূতপ্রমথনায় স্বাহা ।
ওং নমো ভগবতে পংচবদনায় পশ্চিমমুখায় গরুডাননায় সকলবিষহরায় স্বাহা ।
ওং নমো ভগবতে পংচবদনায় উত্তরমুখায় আদিবরাহায় সকলসংপত্করায় স্বাহা ।
ওং নমো ভগবতে পংচবদনায় ঊর্ধ্বমুখায় হযগ্রীবায় সকলজনবশংকরায় স্বাহা ।। "
বাড়ির মুখ্য দুয়ারে পঞ্চমুখী হনুমানজির ছবি স্থাপন করে এই মন্ত্র যদি প্রতিনিয়ত পাঠ করা হয় তাহলে কোন নেতিবাচক শক্তি আপনার বাড়ির চারিদিকে বা আপনার বাড়ির কোন মানুষের উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেনা।
৮. হনুমান ধ্যান মন্ত্র:
"ওঁ হনুমতে রুদ্রাত্মকায় হুং ফট্ ।।"
এই মন্ত্রটি ধ্যানের সময় ব্যবহার করা হয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
৯. হনুমান রক্ষা মন্ত্র:
"ওঁ হ্রীং হনুমতে শ্রী রামদূতায় নমঃ ।।"
এই মন্ত্রটি ভক্তকে সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করে।
১০. হনুমান প্রণাম মন্ত্র:
"মনোজবং মারুততুল্যবেগং
জিতেন্দ্রিয়ং বুদ্ধিমতাং বরিষ্ঠম্ ।
বাতাত্মজং বানরযূথমুখ্যং
শ্রীরামদূতং শিরসা নমামি ।।"
যেকোনো সময় আপনি হনুমানজি এই প্রণাম মন্ত্র জপ করতে পারেন এই প্রণাম মন্ত্র এতটাই শক্তিশালী যে আপনার সমস্ত মনস্কামনা হনুমানজী তৎক্ষণাৎ পূর্ণ করে দেন।
- কীভাবে হনুমানজির পূজা বা মন্ত্র জপ করবেন?
প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় স্নান করে পরিষ্কার জায়গায় , পরিষ্কার লাল বস্ত্র পড়ে, লাল আসনে বসুন। হনুমানজীর ছবি বা মূর্তি সামনে একটি চৌকির ওপরে উত্তর-পূর্বকোণে লাল কাপড়ের ওপরে রাখুন এবং ধূপ-দীপ জ্বালান। সত্য দেশে ঘি এর প্রদীপ জ্বালাতে পারলে সবথেকে ভালো হয়। মনোযোগ সহকারে মন্ত্র জপ করুন। একটা কথা মনে রাখবেন, হনুমানজি আপনার মনের ভাবেই প্রসন্ন হন। তাই আড়ম্বরের থেকে নিজের মন ও সংযোগটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন। জপ শেষে হনুমানজীর কাছে প্রার্থনা করুন এবং নিজের দোষ ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন।
হনুমানজির মন্ত্র জপ শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-আচরণে মধ্যে আবদ্ধ নয় এটিকে একটি শক্তিশালী আধ্যাত্মিক অনুশীলন বলা যেতে পারে।
আমরা সকলেই জানি যে হনুমানজি একমাত্র দেবতা যিনি সারা জীবন ব্রহ্মচারী ছিলেন। তাই হনুমানজিকে প্রসন্ন করতে গেলে হনুমানজির মন্ত্র জপ করতে গেলে হনুমানজির সিদ্ধি পেতে গেলে আপনাকেও সর্বপ্রথম ব্রহ্মচারী হতে হবে।
তাই আপনি যদি নিয়মিত হনুমান মন্ত্র জপ করেন, তাহলে আপনার জীবনের সব ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং আপনি আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে এগিয়ে যাবেন।
জয় শ্রী রাম, জয় হনুমান!
উপরে উক্ত হনুমান মন্ত্র ও আচার গুলি ছাড়া আর যদি আপনাদের কিছু জানা থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে লিখে জানাবেন। আর যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না । কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা একান্ত কাম্য। হনুমানজীর আশীর্বাদ আপনার জীবনে বর্ষিত হোক!