কর্পূরের ১০টি কর্পূরের গুনাগুন :-
কর্পূর (Camphor or Kapur) একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা মূলত কর্পূর গাছ থেকে উৎপন্ন হয়। এটি নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক এবং সৌন্দর্যবর্ধক উপকারিতার জন্য বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কর্পূরের গন্ধ, এর এন্টিসেপটিক গুণ, বিভিন্ন চিকিৎসা, সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং শান্তিদায়ক প্রভাবের কারণে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। আজ আমরা আলোচনা করব কর্পূরের ১০টি ব্যবহার ও উপকারিতা নিয়ে।
১. শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সমাধান :-
কর্পূর শ্বাসকষ্ট, কাশি, ব্রংকাইটিস এবং ঠান্ডা সংক্রান্ত সমস্যার জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর গন্ধ শ্বাসনালী খুলে দেয় এবং শ্বাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। হালকা উষ্ণ গরম জলে কিছু কর্পূর তেল মিশিয়ে সেঁকার মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা থেকে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। এছাড়া ,একটা কাপড়ের মধ্যে কয়েকটা কর্পূরের টুকরো নিয়ে নাকে শুঁকলেও নিশাসের অসুবিধা দূর হয়।
২. মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের উপশম :-
কর্পূর মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের উপশমে সহায়ক। এটি মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে এবং মাথাব্যথা কমাতে সহায়ক। এর তেল ব্যবহার করে মাথায় ম্যাসাজ করলে ব্যথার উপশম হতে পারে।
৩. শরীরের ব্যথা কমানো :-
কর্পূর একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, পেশী শক্তি, গাঁটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। কয়েকটা কর্পূরের টুকরো সর্ষের তেলের মধ্যে মিশিয়ে একটু গরম করে তারপর ঠান্ডা করে বোতলে ভোরে রেখে দিন, আর এই তেল রোজ ম্যাসাজ করলে আপনার যেকোনো শারীরিক ব্যাথা দ্রুত উপশম হয়।
৪. ত্বকের পরিচর্যা :-
কর্পূর ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানে কার্যকর। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক এবং একজিমা, চর্মরোগ, এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের স্নিগ্ধতা এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
৫. মশা ও পতঙ্গের হাত থেকে মুক্তি :-
কর্পূর মশা এবং অন্যান্য পতঙ্গ দূর করতে সাহায্য করে। মশার বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে এটি অত্যন্ত কার্যকর। আপনি যদি কর্পূর তেল মোমবাতি বা ডিফিউজারে ব্যবহার করেন, তাহলে এটি মশা এবং অন্যান্য পতঙ্গ দূরে রাখবে।
৬. মানসিক চাপ কমানো :-
কর্পূরের গন্ধ স্নায়ু শান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি উদ্বেগ,হতাশা এবং মানসিক অস্থিরতা দূর করে। গভীর শ্বাস গ্রহণের সময় কর্পূরের গন্ধ শ্বাসে নিলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
৭. ঘুমের উন্নতি :-
মাত্র একটি কর্পূরের টুকরো আপনাকে গভীর নিদ্রা দিতে পারে। হা আপনি ঠিকই শুনেছেন , যাদের ইন্সোমিনিয়া আছে , রাতে ঘুমোতে পারেন না তারা প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটা কর্পূরের টুকরো নিয়ে নাকে শুকুন এবং কিছুক্ষন গভীর নিঃশাস নিন , দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি আপনার গভীর ঘুম ছেলে আসবেই । এটি স্নায়ু শিথিল করে এবং শোওয়ার সময় কর্পূর তেলের গন্ধ রাতে শ্বাস নিলে ঘুমের মান উন্নত করে।
৮. শীতলতা ও তাপ থেকে সুরক্ষা :-
কর্পূর গরম এবং ঠাণ্ডা দুই ধরনের আবহাওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে। এটি শরীরের অতিরিক্ত গরম বা শীতকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। গরম আবহাওয়ায় কর্পূর তেলের স্নান বা ত্বকে ম্যাসাজ করলে শীতল অনুভূতি দেয়।
৯. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা :-
কর্পূর ত্বকে মেসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এটি গাঁটের ব্যথা এবং পেশীর দড়ি শক্তির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত সঞ্চালনকে সুস্থ রাখে। কর্পূর ত্বকের ক্ষতস্থানে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। এটি ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং ক্ষত বা পোড়া দ্রুত সেরে ওঠাতে সহায়ক। ক্ষত বা পোড়া থেকে আরাম থেকে আরাম দেয়।
১০. দুর্বল গ্রহ এবং দোষ দূরীকরণ :-
হিন্দু জ্যোতিঃশাস্ত্রে কর্পূরের ব্যবহার একটি শক্তিশালী উপায় হিসেবে বিবেচিত হয় যেটি অশুভ গ্রহের দোষ দূর করতে সহায়ক। কর্পূর পুড়ানোর মাধ্যমে শনি, মঙ্গল, রাহু, কেতু বা অন্যান্য অশুভ গ্রহের নেতিবাচক প্রভাব কমানো যেতে পারে এবং শুভ শক্তির প্রবাহ বাড়ানো যায়। প্রতিদিন সন্ধ্যে বেলায় কর্পূর গুগলের সাথে পুড়িয়ে তার ধোঁয়া সারা বাড়ির চারিদিকে দিলে গৃহের সুখ শান্তি বজায় থাকে , গৃহে লক্ষীর আগমন ঘটে। এছাড়া , এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক জীবনে উন্নতি ঘটায়।
কর্পূর এক প্রাকৃতিক উপাদান যা নানা শারীরিক, মানসিক এবং সৌন্দর্যবর্ধক উপকারিতার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে সবসময় কর্পূর কেনার সময় বিশুদ্ধ নির্ভেজাল কর্পূর কিনবেন। নাহলে এর সঠিক উপকার আপনি পাবেন না।