লাল কিতাব অনুসারে রাহুর দশা থেকে মুক্তির উপায় ?
ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাহু গ্রহকে অশুভ গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাহুর প্রভাবে মানুষের জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে যেমন মানসিক অশান্তি, আর্থিক সমস্যা, শারীরিক অসুস্থতা, দাম্পত্য সমস্যা, এবং অন্যান্য দৈনন্দিন সমস্যা। লাল কিতাব, যা হিন্দু জ্যোতিষ শাস্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, রাহুর প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন উপায় এবং প্রতিকার উল্লেখ করেছে। এই ব্লগে, আমরা রাহু গ্রহের প্রভাব কমানোর জন্য লাল কিতাবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় আলোচনা করব।
রাহুর মন্ত্র পাঠ করা :
রাহু গ্রহের প্রভাব কমানোর সবচেয়ে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো মন্ত্র পাঠ। লাল কিতাব অনুসারে, রাহু গ্রহের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে "ওম রাহুবে দেবায় শান্তিম, রাহুবে কৃপায়ে করোতি, রাহুবে চামায়ে অভিলাশত, ওম রাহুবে নমো নমঃ।" মন্ত্রটি নিয়মিত উচ্চারণ করতে হবে। প্রতিদিন এটি ১০৮ বার পাঠ করা উচিত। মন্ত্রটি রাহুর শক্তিকে কমাতে সহায়তা করে এবং জীবনে শান্তি আনতে সাহায্য করে।
নীল সুতো পরিধান করা :
লাল কিতাবের মতে, রাহুর প্রভাব কাটানোর জন্য নীল সুতো পরিধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশেষভাবে বাম হাতে পরা উচিত। নীল সুতো পরিধান করলে রাহুর অশুভ শক্তি থেকে বাঁচা যায় এবং এটি জীবনে স্থিতিশীলতা আনে।
এছাড়া, হনুমান যন্ত্র লকেট ধারণ করতে পারেন।
দানে গুরুত্ব দেওয়া :
লাল কিতাব অনুসারে, রাহুর প্রভাব কমাতে দান করা অত্যন্ত কার্যকরী। বিশেষভাবে, কালো তিল, কালো মটর এবং কালো কাপড় দান করা উচিত। দান করলে শুভ ফল পাওয়া যায় এবং রাহুর প্রভাব কমে যায়। এই দানগুলি গরিব, দরিদ্র বা অসহায় ব্যক্তিদের কাছে করা উচিত।
রাহু গ্রহের ধাতু ব্যবহার :
রাহু গ্রহের প্রভাব কমানোর জন্য হাতের আঙুলে রাহুর ধাতু বা রুপোর ধাতুর যেকোনো গহনা ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি রাহুর প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং জীবনে উন্নতি নিয়ে আসে। রুপোর গ্লাসে জল খেতে পারেন, এতেও রাহুর কু প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বিশেষত গোমেদ পাথরের রুপোর আংটি বানিয়ে অঙ্গুলিতে ধারণ করলে এটি অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি দেয়। তবে রত্ন ব্যবহারের আগে জ্যোতিষীর পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ রত্নের প্রভাব ব্যক্তির জন্মচক্রের ওপর নির্ভরশীল।
গৃহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা :
লাল কিতাব অনুযায়ী, রাহুর প্রভাব কমানোর জন্য বাসস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা , বাড়ির মুখ্য দরজা পরিষ্কার রাখা, বাড়ির ছাদ , উঠোন পরিষ্কার রাখা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ । বাড়িতে কখনও কোনো ভাঙ্গা ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য রাখবেন না , এটি রাহু গ্রহের কু বাড়িয়ে দেয় । বাড়ির যেকোনো ভাঙ্গা জিনিস বাড়ির বাইরে ফেলে দিলে বা বিক্রি করে দিলে রাহুর প্রভাব কমিয়ে জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আনে।
হনুমানজি ও কালী মায়ের পূজা করা :
লাল কিতাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো শনিবার ও মঙ্গলবার হনুমানজি ও কালী মায়ের পূজা করা। হনুমানজি ও কালী মা রাহু গ্রহের অশুভ শক্তিকে দূর করতে সক্ষম। হনুমানজি ও কালী মায়ের পূজা এবং অর্চনা করলে রাহুর প্রভাব কমে এবং জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। পূজা করার সময় হনুমানজি ও কালী মায়ের কাছে লাল ফুল ও চারমুখী প্রদীপ নিবেদন করা উচিত।
উপবাস রাখা :
লাল কিতাবের মতে, সোম , মঙ্গল ও শনিবার রাহুর প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে উপবাস রাখা উচিত। উপবাস রাখলে রাহু গ্রহের শক্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং জীবনে সফলতা আসে। তবে উপবাসে সতর্ক থাকতে হবে এবং যথাযথ নিয়ম মেনে তা পালন করা উচিত।
প্রদীপ জ্বালানো :
রাহুর প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে প্রতি মঙ্গলবার বা শনিবার হনুমান মন্দিরে বা কালী মন্দিরে গিয়ে সর্ষের তেল বা চামেলি তেলের চারমূখী মাটির প্রদীপ জ্বালাতে হবে । সোমবারে ভগবান শিবের মন্দিরে গিয়ে প্রদীপ জালালেও হবে । এই উপায়টি পরপর ১১ দিন করতে হবে । এই উপায়টি রাহু গ্রহের অশুভ শক্তিকে দূর করে এবং জীবনে শান্তি এবং সুখ আনতে সাহায্য করে। মন্দিরে যেতে না পারলে বাড়ির তুলসী মঞ্চে দিলেও হবে।
বাজারে নীল কাপড় কেনা :
লাল কিতাব অনুসারে, বাজারে গিয়ে নীল কাপড় কেনা এবং তা পবিত্র স্থান যেমন মন্দিরে দান করা রাহু গ্রহের প্রভাব থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক হতে পারে। নীল কাপড় রাহুর শক্তিকে শোষণ করতে সাহায্য করে এবং জীবনে শান্তি নিয়ে আসে। তাছাড়া নীল রং শনি দেবের খুব প্রিয় রং তাই যার উপর শনি দেবের হাত থাকে তার উপর রাহুর কু প্রভাব দুর্বল হয়ে যায় ।
লাল কিতাব অনুসারে রাহু গ্রহের অশুভ প্রভাব কমানোর জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, এসব উপায় শুধুমাত্র রাহু গ্রহের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু জীবনে বাস্তবিক পরিবর্তন আনার জন্য কঠোর পরিশ্রম, সততা এবং সঠিক পথে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া আপনার কুল-দেবদেবীর পূজার্চনা নিয়মিত করুন। তাছাড়া, ভালো কাজের প্রতি মনোনিবেশ করুন এবং প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করুন।
আপনার ব্যক্তিগত রাহুর অবস্থান জানাতে একজন অভিজ্ঞ জ্যোতিষীর পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ রাহুর প্রতিকার প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ভিন্ন হতে পারে।
বিভিন্ন গ্রহের প্রভাব ও প্রতিকার এবং জোতির্শাস্ত্র সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে এই বইগুলো পড়তে পারেন। (Affiliate)
%20Recruitment%202024%20Apply%20Online.jpg)
